কিন্তু তোমরা অনেকেই জানোনা তোমাদের স্বপ্নটা কি!
অনেকেই হয়তো সফল ব্যক্তিদের থেকে আইডিয়া নেওয়ার চেষ্টা চালাও, তারা কিভাবে সফল হয়েছে সেই স্টেপগুলো ফলো করবে বলে ভেবে বসে আছো।
সবাই আসলে শর্টকাট খোঁজে, কিভাবে অল্পকিছু দিনে কোটিপতি হয়ে যাওয়া যায় সেই রাস্তা তালাশ করে।
এভাবেই সবাই মানে বেশিরভাগ মানুষ ভুল করে। সফল ব্যক্তিদের সফল হওয়ার পেছনের গল্পটিকে নিজের সাথে মিলিয়ে ফেলে, ভাবে হয়তো তাদের মতো একই কাজ করলে বোধহয় জীবনে তাদের মতো কিছু একটা হয়ে যাওয়া যাবে।
ধরা যাক, তোমার বয়স ১৬-১৯, তুমি নিশ্চয়ই এখনি ভেবে নাওনি তোমার ভবিষ্যতে কি করবে! কিছু ব্যতিক্রম থাকতে পারে তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই বয়সের টিনএজাররা খুব কমই ম্যাচিউরড হয়। তুমি এই পৃথিবী সম্পর্কে মাত্রই জানা শুরু করেছো।
যেসব মেয়েরা তোমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসি দিচ্ছে তুমি অনায়াশে তাদের সবার প্রেমে পড়ে যাচ্ছো। তোমার কাছে এখন জীবন মানেই বন্ধুত্ব, গেজেটস, স্টাইলিশ আউটফিট, এমন কিছু করা করার চেষ্টা করা যাতে ফ্রেন্ডসার্কেলে তোমার দাম বাড়ে।
আর তুমি এখন যে জীবনে আছো তার একমাত্র দর্শন হলো, "Live in the Moment".
আচ্ছা এখন বলো কোন দৃশ্যপটটা বেশি ভালো মনে হয়,
দৃশ্যপট ১: আমি কি করেছি আমার জীবনে? এতগুলো বছর অঝথাই নষ্ট করলাম! আমি জানি না এখন কি করা উচিত আমার। এত এত সুযোগ একটাও কাজে লাগাতে পারলাম না। যেভাবেই হোক এখন আমাকে অন্তত একটা চাকুরী খুঁজতে হবে।
দৃশ্যপট ২: ধুর মজা লাগছে না আর! এই চাকুরী আর ভালো লাগছে না, যদিও বেতন বেশ ভালোই, আর আমি এমনিতেও যথেষ্ট স্বাবলম্বী হয়ে গেছি। আমার মনে এখন সময় হয়েছে নিজের পছন্দের কিছু করার।
যখন তুমি ২৫ বছর বয়স পার করবে তখন উপরের দুটি দৃশ্যের যেকোনো একটির মুখোমুখি তোমায় হতে হবে।
উপরোক্ত দুটি দৃশ্যপট এর মাঝে পার্থক্য কোথায়?
দৃশ্যপট ২ এর মানুষরা নিঃসন্দেহে সুখী, সফল, অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী এবং সবচেয়ে বড় বিষয় নিজের জীবন নিয়ে খুশি।
অপরদিকে দৃশ্যপট ১ এর মানুষ গুলো তখন হতাশায় আচ্ছন্ন, বেকারত্বের অভিশাপগ্রস্ত, সামাজিক ভাবে অপদস্থ এবং তারা নিজের পছন্দকে অনুসরণ করার বদলে তখন কোনরকমে একটা চাকুরী পাওয়ার আশায় আশান্বিত।
দৃশ্যগত ১ এর মানুষ গুলো যখন তাদের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা খুঁজে বেড়াচ্ছে তখন দৃশ্যপট ২ এর মানুষ গুলো তাদের পছন্দসই কিছু করার স্বাধীনতা পাচ্ছে।
দৃশ্যপট ১ এর মানুষ গুলোর ব্যক্তিত্ব তাদের জীবনের স্তরগুলোতে বারবার পরিবর্তিত হতে থাকে। মুভিতে হয়তো দেখা যায়, নায়ক সর্বদা অবিচল ন্যায়ের অবতার নিষ্ঠার অটল সমুদ্র হিসেবে মুভি শেষ করে কিন্তু বাস্তব জীবনে মানুষ এর ব্যক্তিত্ব তার পারিপার্শ্বিক অবস্থা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
সবচেয়ে বেশি যে পরিবর্তন গুলো দেখা যায় তা হলো, তারা আস্তে আস্তে অসামাজিক, নিরব, মাদকাসক্ত, সবসময় হতাশায় জর্জরিত, পরিবারের থেকে বিচ্ছিন্নতা, বন্ধুবান্ধব এর সঙ্গত্যাগ। এভাবে তাদের জীবন তখন হয়ে যায় হতাশার নামান্তর।
আচ্ছা এখন প্রশ্ন হলো এমন হয় কেনো?
এর পেছনে সবচেয়ে কারণ হলো টাকা। এখানে আমি টাকা বলতে ব্যক্তিগত উপার্জন বোঝাচ্ছি।
আমরা যে সমাজে বাস করি সেখানে টাকা আমাদের সব চাওয়া-পাওয়ার সাথে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত , এমনকি টাকা আমাদের আবেগেরও নিয়ন্ত্রক। টাকা আমাদের মানসিক পরিস্থিতিকেও নিয়ন্ত্রণ করে।
এই টাকার অভাবেই দৃশ্যপট ১ এর মানুষরা তাদের সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়, একা হয়ে যায়। কারণ সমাজ তাদের ক্যারিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলে কিন্তু জবাব তাদের জানা থাকে না। তারা জানে তারা সম্মানের পাত্র না, তারা নিজেদের পরিবারের দায়িত্ববহন করতে পারেনা, তাই তারা প্রতিনিয়ত লজ্জিত হতে থাকে। তাদের মনে ধারণা জন্মাতে থাকে যে, তারা অযোগ্য, ব্যর্থ আর এই ব্যর্থতার ছায়া পড়তে থাকে সর্বত্র।
অপরদিকে দৃশ্যপট ২ এর মানুষরা সমাজে সম্মানিত কারণ সমাজ অর্থনৈতিক সচ্ছলতার মানদন্ডে সফলতা বিচার করে। তাদের শুভাকাঙ্ক্ষীর অভাব নেই, পরিবার-পরিজন, বন্ধুবান্ধব সবার সাথে তাদের বেশ উষ্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান। তাদের সামনে অবারিত সুযোগ থাকে নিজেদের মতো করে জীবনযাপন করার।
তাই নিজের জীবন নিয়ে এখনই ভাবো, লক্ষ্য ঠিক করে দক্ষ হও, কর্মঠ হও, অধ্যবসায়ী হও। জীবনের কাছে যেটুকু পাওয়া তার সবটা কড়ায়-গন্ডায় বুঝে নাও।
বর্তমান উপভোগ্য তবে চিরস্থায়ী নয়। বর্তমানের ফাঁদে পড়ে ভবিষ্যৎ কণ্টকময় করো না।
জীবনটা তোমার তাই সিদ্ধান্তও তোমার।
তুমিই ঠিক করো তুমি কোন কাতারে পড়তে চাও, দৃশ্যপট ১ নাকি দৃশ্যপট ২?
যদি তোমার উত্তর হয় ২ তাহলে এখন থেকেই সংকল্পিত হয়ে যাও আর যাই করো অন্তত সময় এর সঠিক ব্যবহার অবশ্যই করবে। অন্যকেউ কিংবা কিছুকে অনুসরণ করার ফাঁকে নিজের জন্যেও কিছু সময় ব্যয় করবে। পড়ালেখার যে কোনো বিকল্প নেই এটা তো সবারই জানা কথা তাই তা নিয়ে আর কিছু বললাম না,ওইসব স্পিকারদের জন্যই জমা থাক।
পরিবর্তন চাইলেই পরিবর্তন আসে না তার জন্য পরিশ্রম করতে হয়।
COMMENTS