Seneca the Younger(c. 4 BC – AD 65) |
সেনেকা ছিলেন একজন রোমান দার্শনিক।
স্পেনের কর্ডোভাতে জন্মগ্রহণ করলেও
খুব অল্প বয়সে পরিবারের সাথে রোমে চলেআসেন। মায়ের প্রভাবে দর্শনের জগতে প্রবেশকরেন। স্টোয়িকবাদের সাথে পরিচিত হন এবংশক্ত অনুসারী এবং প্রচারকে পরিণত হন। ছিলেনরোমান সম্রাট নিরোর গৃহশিক্ষক এবং পরবর্তীতেউপদেষ্টা। রাজনীতির রেষারেষি থেকে দূরেথেকে দর্শনের জগতে কাজ করার জন্য উৎসাহিতকরার চেষ্টা চালিয়েছিলেন রোমান সম্রাট নিরোরউপর। বড় হওয়ার সাথে সাথে নিরো তর শিক্ষক
সেনেকার প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে যান। সম্রাট নিরোর
মধ্যে দার্শনিকতা বা দার্শনিক রাজার
গুণাবলী ছাড়া অন্য অনেক কিছুই ছিল। খুব
স্বাভাবিকভাবেই সেনেকার স্টোয়িক দর্শন
দ্বারা বেশি প্রভাবিত হননি।
রোমান সম্রাট নিরোকে হত্যার লক্ষ্যে পিসোনিয়ান
ষড়যন্ত্র হয় ৬৫ খ্রি.। সেই ব্যর্থ ষড়যন্ত্রে সেনেকার
নামও চলে আসে (তবে বেশিরভাগ গবেষকদেরই
মতামত সেনেকা এতে জড়িত ছিলেন না)।
রাজরোষের শিকার হন গ্রীক ট্রাজেডির অন্যতম
দিকপাল সেনেকা এবং তাকে মৃত্যুদণ্ড দিলো
তারই ছাত্র সম্রাট নিরো।
আরেকটি সক্রেটেসীয় কাহিনীর শুরু।
সেনেকাকে নিজের জীবন নিজে নেওয়ার সুযোগ
দেওয়া হলো। সেনেকা তার রগগুলো কেটে দিলেন
যাতে রক্ত ফুরিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে মারা যেতে
পারেন। বুড়ো বয়সের কারণে হয়তো রক্ত ধীরে
ধীরে বের হচ্ছিল। এজন্য সক্রেতিসের মতো বিষও
পান করেছিলেন সেনেকা। বিষটি দুর্বল হওয়ার
কারণে সেটাও ধীরে ধীরে কাজ করছিলো।
অবশেষে দ্রুত মৃত্যুর জন্য উষ্ণ পানির টাবে নামেন।
আশেপাশে ভক্ত ও শিষ্য পরিবেষ্টিত হয়ে
সেনেকা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
সেনেকার বেশিরভাগ নাটকই ট্রাজেডি।
বিখ্যাত নাটকগুলো হচ্ছে: দ্য ম্যাডনেস অব হারকিউলিস, দ্য ট্রোজান ওইমেন, দ্য ফিনিসিয়ান ওইমেন, আগামেমনন, ঈদিপাস, মিদিয়া।
অন দ্য শর্টনেস অফ লাইফ
সেনেকা ৪৯ খ্রিস্টাব্দে পলিনাস নামে একজন রোমান রাজকর্মচারীকে উদ্দেশ্য করে ‘অন দ্য শর্টনেস অব লাইফ’ লিখেছিলেন।
ল্যাটিন ভাষায় বইটির শিরোনাম ছিল 'De Brevitate Vitæ'.
মানুষের জীবন কেন এত ছোট এ নিয়ে বেশিরভাগ মানুষেরই অভিযোগ আছে। কিন্তু এ স্বল্প জীবনেই যে সাফল্য অর্জন করা যায় তার পথ বাতলে দিয়েছেন সেনেকা। বেশিরভাগ মানুষই কিভাবে অন্যের জন্য বাঁচে, অন্যের জীবন যাপন করে এবং সবচেয়ে কম কাছের থেকে যায় নিজের কাছে এর উপলব্ধি হবে বইটি পড়ে।
সেনেকার মতে সব মানুষের মধ্যে যারা দর্শনের জন্য সময় রাখে তারাই আসলে সত্যিকার বাঁচে। তারা শুধু নিজের জীবন যাপন নিয়েই সন্তুষ্ট নয়, তারা সব যুগকে নিজের জীবনের সাথে যোগ করতে পারে। কোন যুগই তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন নয়, সব যুগেই তাদের সমান প্রবেশাধিকার রয়েছে।
আমরা ইচ্ছে করলে সক্রেতিসের সাথে তর্ক করতে পারি, কার্নিয়াদস এর সাথে সন্দেহ প্রকাশ করতে পারি, এপিকিউরিয়াস এ শান্তি পেতে পারি, স্টোয়িকদের মাধ্যমে মানব প্রকৃতির দুর্বলতা জয় করতে পারি, সিনিকদের মাধ্যমে সেটা আরও এক ধাপ এগিয়ে যেতে পারি। আমরা সময়ের তুচ্ছ সীমা অতিক্রম করে অতীতের সেরা সেরা মানুষদের সংস্পর্শে থাকতে পারি।সেনেকার ‘অন দ্য শর্টনেস অব লাইফ’ মূলত এরকম একটি থিমের উপর ভিত্তি করেই দাড়িয়ে আছে।
জীবনের যে অংশটা সত্যিকারভাবে বাঁচি সেটা আসলে খুবই ছোট। আর আমাদের অস্তিত্বের বাকি অংশটা বাঁচা নয়, সেটা শুধুই সময় কাটানো।
“The part of life we really live is small. For all the rest of existence is not life, but merely time.”
যে অতীতকে ভুলে যায়, বর্তমানকে অবহেলা করে এবং ভবিষ্যতকে ভয় পায় তার জীবনটা আসলে খুবই ছোট এবং সংকটপূর্ণ। এরকম হতভাগারা যখন জীবনের শেষ অংশে পৌছে যায় তখন দেখতে পারে তারা তাদের এই দীর্ঘ জীবনে বেহুদা কাজেই ব্যস্ত ছিল।
বইটি আপনাকে এমন আরো অনেক কিছু ভাবতে বাধ্য করবে যা হয়তো আপনি খুব কমই গুরুত্ব প্রদান করেন।
এই বইয়ে সেনেকার উপদেশমূলক কথাগুলো বেশ জ্ঞানগর্ভ:
প্রত্যেকেই যেন এক তাড়ার মধ্যে আছে; ভবিষ্যতের
কাছে কামনা এবং বর্তমানকে নিয়ে উদ্বেগের
মধ্যে থাকে। কিন্তু যে তার পুরো সময়টা নিজের জন্য বরাদ্দ
রাখে, যে মনে করে প্রতিটি দিনই তার শেষ দিন
হতে পারে সে কখনো অহেতুক কামনার মধ্যে বাঁচে
না বা আগামীকাল নিয়ে অহেতুক ভীতির মধ্যে।
কোন ঘন্টা তার জন্য কি নতুন আনন্দ নিয়ে আসতে
পারে? এগুলো তো জানা হয়ে গেছে, একেবারে
ভরপুর উপভোগ করা হয়েছে।
কারো ধূসর চুল বা কুচকানো চামড়া দেখে ভাবার
উপায় নেই সে অনেকদিন বেঁচেছে।
সে আসলে দীর্ঘদিন টিকে ছিল।
বন্দর থেকে জাহাজে উঠার পর অল্পক্ষণ পরই কোন
নাবিক যদি ঝড়ের কবলে পড়ে এবং উদ্দাম সমুদ্রে
এদিক ওদিক লাফালাফি করে, বৃত্তাকারে একই
জায়গায় ঘুরেফিরে তাকে তো বলা যাবে না
অনেক পথ ভ্রমণ করেছে।
সে অনেক অভিযান করেনি, এদিক ওদিক ঘুরেছে
মাত্র।
পৃথিবীতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুলো নিয়ে
মানুষ তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে। কারণ এগুলো চোখের
কোণায় ধরা পড়ে না। এজন্য এটাকে সস্তা জিনিস
হিসেবে গুণা হয়ে থাকে যেন এর কোন মূল্যই নেই।
এই যে তারা সময়কে কোন মূল্য দেয় না, এটা
দেদারছে বিলিয়ে দেয়। আবার তারাই যখন অসুস্থ হয় বা তাদেরকে মৃত্যুদণ্ড
দেওয়া হয় তখন ডাক্তারের পায়ে পড়ে, বিচারকের
কাছে প্রাণভিক্ষা চায় এবং সকল অর্জিত সম্পদের
বিনিময়ে হলেও আরেকটু সময় বেশি বাঁচতে চায়।
মানুষের অনুভূতির এই হলো দ্বিচারিতা।